মিরপুরের ইনডোরে ঢুকে ছটফট করছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল। যেন তর সইছিল না, কখন নামবেন ব্যাটিং অনুশীলনে। দ্রুতই জুতোর ফিতা বেঁধে হালকা ওয়ার্মআপ, থাই গার্ড পড়ে পায়ে বাঁধলেন প্যাড। মাথা ঢাকলেন হেলমেটে। ব্যাট, হ্যান্ড গ্লাভস হাতে ছুটলেন নেটের দিকে। ফিরে পাওয়া গেল তিন বছর আগের সেই আশরাফুলকে। ইনডোরের বোলিং মেশিনে ব্যাট চালালেন আত্মবিশ্বাস নিয়েই। তার ব্যাটের সুইটপার্টে বলের সংযোগ দেখে অবাক ইনডোর ম্যানেজারসহ ক্রীড়া সাংবাদিকরা। কয়েকটি বল তো নেট দিয়ে ঘেরা বেষ্টনী পেরিয়ে চলে গেলো বাইরে। সোজা বলে মানিয়ে নিয়ে মেশিন অপারেটরের কাছে চাইলেন আউটসুইং। তাতেও থামানো গেল না আশরাফুলকে। ব্যাটকে ফাঁকি দিয়ে কোনো বলই যেতে পারলো না উইকেটের পেছনে। বিসিবি’র অবকাঠামো ব্যবহার করে তিন বছর অনুশীলন করতে পারেননি আশরাফুল। তবে নিজ উদ্যোগে অনুশীলন ঠিকই চালিয়ে গেছেন বাংলাদেশের কনিষ্ঠতম এই টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান, ‘শেষ তিন বছর কিন্তু আমি নিজে নিজে অনুশীলন করেছি ওয়াহিদ স্যারের (ওয়াহিদুল হক গনি) কাছে, ইমরান স্যারের (সারোয়ার ইমরান) কাছে। ক্রিকেট বোর্ডের অধীনে মিরপুরে অনুশীলন করতে পারিনি। এখন সে সুযোগ পেয়েছি। সবার সহযোগিতা হয়তো পাবো। কোচিং স্টাফ, ট্রেনারদের সহায়তাও পাবো।’
শেষ কবে বিসিবি’র অধীনে অনুশীলন করেছেন সেটিও মনে রেখেছেন ফিক্সিংয়ের দায়ে তিন বছর ক্রিকেটের বাইরে থাকা মোহাম্মদ আশরাফুল, ‘তিন বছর পাঁচ মাস পর এখানে অনুশীলন করছি। ১৩ বছর ক্রিকেট খেলেছিলাম জাতীয় দলে, প্র্যাকটিস করতে পারছিলাম না...। আজ খুব ভালো লাগছে দ্বিতীয় সুযোগ পেয়ে। আশা করি বাকি জীবনটা যেন ভালোভাবে কাটাতে পারি। এখানকার সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করে যেন ভালো ভালো ইনিংস উপহার দিতে পারি সেটাই আমার লক্ষ্য থাকবে।’
তিন বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফিরে কতটা ভালো করা যাবে- এ নিয়ে খোদ আশরাফুলের মাঝেই ছিল সংশয়। তবে ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে যেতেই আত্মবিশ্বাস যেন দ্বিগুন হয়ে গেছে আশরাফুলে। চলা ফেরা, কথা-বার্তার মাঝেই সে ছাপ স্পষ্ট, ‘আমি ১৬ বছরে যে ভালোবাসা পেয়েছি, বিশেষ করে শেষ তিন বছর খেলার বাইরে থাকার পরও যে সাপোর্ট পেয়েছি আমার ভক্ত, পরিবার, বন্ধু-বান্ধব ও কাছের মানুষের কাছে...তাদের জন্য হলেও আমি দেশকে কিছু দিতে চাই। এটার জন্য যত হার্ডওয়ার্ক প্রয়োজন আমি সেটা করবো।’
বিপিএলে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগে ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে মোহাম্মদ আশরাফুলের তিন বছরের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ১৩ আগস্ট। নতুন করে জীবন পাওয়া আশরাফুল এখন ভক্তদের কাছ থেকে শুভেচ্ছা গ্রহণে ব্যস্ত। আশরাফুল আপাতত ঘরোয়া ক্রিকেটে অংশ নিতে পারলেও, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ও ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক ক্রিকেট লীগ, বিপিএলে খেলতে পারবেন না আগামী দুই বছর। এরপর সব ধরনের ক্রিকেট থেকেই আশরাফুলের উপর থেকে উঠে যাবে নিষেধাজ্ঞা। তখন আশরাফুলের বয়স হবে ৩৪। আশরাফুল কি পারবেন ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজেকে প্রমাণ করে দু’বছর পর আবারও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতে? উত্তরটা সময়ের হাতেই তোলা থাক।
সূত্র : বাসস