বড় দল হয়ে ওঠার প্রমাণ

এটা সত্যি যে, ম্যাচের সার্বিক পারফরম্যান্স নিয়ে সিনিয়ররা অন্তত কেউই খুব সন্তুষ্ট নন। তারা বলছেন, পারফরম্যান্সে একটা জড়তা ছিল। তারপরও এই যে প্রত্যাবর্তন, সেটা খুব ইঙ্গিতবহ
এতকাল মুদ্রার ভিন্ন পিঠটাই দেখে এসেছে বাংলাদেশ।
 
বড় বড় দলের বিপক্ষে জিততে জিততে ম্যাচ হেরে যাওয়ার স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে কতবার। কতবার কাছে গিয়ে তরী ডুবেছে তীরে। এই বেশিদিন আগে নয়, ২০১৪ সালেও পাকিস্তানের বিপক্ষে এমন জেতা ম্যাচ হেরেছিলো বাংলাদেশ।
 
পাশার দানটা বদলে গেছে। জিততে জিততে এখন আর হারে না বাংলাদেশ। উল্টো সেই দলই এখন হারতে বসা ম্যাচ বের করে আনছে। সাকিব আল হাসান বলছেন, এটাই জয়ের অভ্যেসের ফল। আর গতকাল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বললেন, এটাই বাংলাদেশের বড় দল হয়ে ওঠার লক্ষণ। হ্যাঁ, এই লক্ষণ বিচারে বাংলাদেশ এখন বড় দল বৈকি।
 
আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে। আগে ব্যাট করে বাংলাদেশ করতে পারল ২৬৫ রান। জবাবে আফগানিস্তান ২টি মাত্র উইকেট হারিয়ে ১৯০ রান তুলে ফেলল। শেষ ১০ ওভারে মাত্র ৭৭ রান দরকার ছিল তাদের। শেষ ৩০ বলে ৩৮ রান দরকার। ওয়ানডে ক্রিকেটে এমন সমীকরণে জয়টা খুবই সম্ভব। আর সেখান থেকেই তিন বোলার—সাকিব, রুবেল এবং সর্বোপরি তাসকিন ভেল্কি দেখালেন। আফগানিস্তানকে উপহার দিলেন ৭ রানের পরাজয়।
 
বিস্ময়কর এই প্রত্যাবর্তন খেলোয়াড়দেরও সন্তুষ্ট করেছে। এটা সত্যি যে, ম্যাচের সার্বিক পারফরম্যান্স নিয়ে সিনিয়ররা অন্তত কেউই খুব সন্তুষ্ট নন। তারা বলছেন, পারফরম্যান্সে একটা জড়তা ছিল। তারপরও এই যে প্রত্যাবর্তন ম্যাচে, সেটাকেই খুব ইঙ্গিতবহ বলছেন রিয়াদ, ‘আমার মনে হয় এটা বড় দলের লক্ষণ। সত্যি বলতে আমরা এমন অনেক ক্লোজ ম্যাচ কাছে গিয়ে হেরেছি। ছোট ছোট ভুলের কারণে কাছে গিয়েও হেরে যেতাম। তো মনে হয় পরিবর্তন চলে এসেছে এবং আস্তে আস্তে আমাদের মধ্যেও পরিবর্তনটা গড়ে উঠছে। তো আশা করছি এটা আমরা অব্যাহত রাখতে পারব এবং আরো ভাল ক্রিকেট খেলতে পারব।’
 
অধিনায়ক মাশরাফির কাছেও এটা নিজেদের প্রমাণ করা, নিজেদের সামর্থের একটা পরীক্ষা দেওয়ার ব্যাপার। সেটা দল ঠিকমতো দিতে পেরেছে। বিশেষ করে তিন বোলারের ওপর যে বিশ্বাসটা অধিনায়ক রেখেছিলেন, সেটার প্রতিদান পাওয়াতেই খুব খুশি মাশরাফি। এই বিশ্বাস রাখার ব্যাপারটা ম্যাচের পরই সাকিব আল হাসান বলছিলেন। তার মতে, ক্রিকেটারদের বিশ্বাস হারানোর উপায় নেই। আর সেই বিশ্বাসটাই তারা রেখেছিলেন।
 
কাল ঠিক একই কথা বলছিলেন রিয়াদ। তার মতে, ‘আমার মনে হয় যে মাশরাফি ভাইয়ের লাস্টের স্পেলের তিনটা ওভার এবং সাকিবের ৪৭তম ওভারটা খুব ক্রুশিয়াল ছিল। কারণ ওটা থেকে মাত্র একটা রান এসেছিল। এরপর আমার বিশ্বাস ছিল রুবেল ও তাসকিনরা যদি ওদের ভাল ইয়র্কারগুলো দিতে পারে ইনশাআল্লাহ আমরা ম্যাচে ফিরতে পারব। একইসঙ্গে ওই সময় উইকেটও আমরা তুলেছি। ওইদিক থেকে আমরা এগিয়ে গিয়েছি বলে আমি মনে করি।’
 
আর এই পুরো ব্যাপারটাকে সাকিব বলছেন, অভিজ্ঞতার ফসল। বাংলাদেশ জিততে পারে, জিততে শিখেছে, এটাই আসলে পার্থক্য গড়ে দিয়েছে বলে সহঅধিনায়কের বিশ্বাস। ‘যে পরিস্থিতি ছিল, জেতাটা ওদের উচিত ছিল। আমার কাছে মনে হয় ওদের অভিজ্ঞতার ঘাটতির কারণে পারেনি। আর আমাদের অভিজ্ঞতা কাজে লেগেছে। আমাদের অনেক প্লেয়ার আছে অনেকগুলো ওয়ানডে খেলেছে। আমরা জানি কিভাবে জিততে হয়। আমি যেটা বললাম যে প্রথম ম্যাচ সবসময়ই একটু ট্রিকি হয়। আর আমরা যেহেতু অনেক দিন পর খেললাম, আমার মনে হয় দ্বিতীয় ম্যাচ থেকে সবকিছু আরো ভালো হবে’।
 
আগামীকাল সেই দ্বিতীয় ম্যাচের অপেক্ষায় থাকবে বাংলাদেশ।

No comments:

Post a Comment

Recent Posts Widget