স্বপ্নময় জয়ের অপেক্ষা

আজ রাতে কী আর চোখ বুজে আসবে! এই রাত ঘুমানোর জন্য নয়। এই রাত কেবলই অপেক্ষার এক রাত। বাংলাদেশের আরেকটা সোনালী জয়ের জন্য অপেক্ষার রাত।

এমন অপেক্ষার রাত এর আগে আসেনি, তা নয়। মুলতান, ফতুল্লায় এমন অপেক্ষার পর স্বপ্নভঙ্গের কথাও মনে আছে বাংলাদেশের। তবে এই দলটা তো একটু অন্যরকম। এই বাংলাদেশ দল আর পেছন থেকে লড়াই করছে না। এই দলের বিপক্ষেই বরং ম্যাচ বাঁচাতে, লজ্জা বাঁচাতে লড়াই করছে এখন শ্রীলঙ্কা!


গল টেস্টে পরাজয়ের পর কলম্বো টেস্টের শুরু থেকে ছড়ি ঘোরাচ্ছে বাংলাদেশ। গতকাল চতুর্থ দিনে এসে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ প্রায় ষোলো আনাই নিজেদের হাতে নিয়ে এসেছেন মুস্তাফিজুর রহমান, সাকিব আল হাসানরা। প্রথম ইনিংসে পাওয়া ১২৯ রানের লিড বাংলাদেশকে এগিয়ে রেখেছে। সাথে বোলাররা প্রবলভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন শ্রীলঙ্কার মিডল অর্ডার। ফলে ৮ উইকেট হারিয়ে এখন শ্রীলঙ্কার লিড মাত্র ১৩৯ রানের।

এই অবস্থায় বাংলাদেশ জয়ের স্বপ্ন দেখতেই পারে। তবে বাস্তবতা হলো, শেষ দুই উইকেট হাতে নিয়ে এখনও লড়ছে শ্রীলঙ্কা। তারা চেষ্টা করছে লিডটা যতোটা বাড়ানো যায়। এই লিডের জবাবে বাংলাদেশকে ব্যাটিং করতে হবে পঞ্চম দিনের উইকেটে। ফলে স্বপ্নের ওপাশে শঙ্কাটাও একেবারে নেই, তা নয়।

কলম্বো টেস্টে প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কা করেছিলো ৩৩৮ রান। জবাবে সাকিব আল হাসানের দারুণ সেঞ্চুরি এবং মোসাদ্দেক, মুশফিক, সৌম্যদের ফিফটিতে ৪৬৭ রান করে বাংলাদেশ; লিড ১২৯ রানের। এই লিডের জবাবে শ্রীলঙ্কা তৃতীয় দিনশেষেই কোনো উইকেট না হারিয়ে ৫৪ রান তুলে ফেলে।

গতকাল দিনের দ্বিতীয় ও নিজের প্রথম ওভারের প্রথম বলেই শ্রীলঙ্কার প্রতিরোধ ভাঙেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এরপর ঝাঁপিয়ে পড়েন মুস্তাফিজ ও সাকিব। দুই প্রান্ত থেকে একজন স্পিনার ও একজন পেসার বলের টার্ন ব্যবহার শুরু করেন। দুই জনই তিনটি করে উইকেট তুলে নেন। প্রথম আক্রমণটা শানান মুস্তাফিজ। তিনি পরপর তুলে নেন কুশল মেন্ডিস ও দিনেশ চান্দিমালের মতো বড় দুই উইকেট। এরপর সাকিব এসে ফেরান গুনরত্নেকে। আবার মুস্তাফিজ ধনঞ্জয় ডি সিলভাকে আউট করার ভেতর দিয়ে নিজের ৩ উইকেট পূর্ণ করেন। মুস্তাফিজের ৩টি ক্যাচই ধরেছেন মুশফিক। ধরেছেন সাকিবের বলেও একটি ক্যাচ।

মুশফিক একটা কীর্তি করে ফেলেছেন। প্রথম টেস্টে ১০০ ডিসমিসাল সম্পন্ন করলেন তিনি। চা-বিরতি অবধি তার মোট শিকার ১০১।

আগের টেস্টেই ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্তে গ্লাভসটা খুলে রেখেছিলেন মুশফিক। ঘটনাচক্রে লিটন ইনজুরিতে পড়ায় আবার কলম্বোতে ফিরতে হয়েছে উইকেটের পেছনে। আর সেখানেই এই মাইলফলক। পাশাপাশি এই ইনিংসে নিজের পঞ্চমবারের মতো ইনিংসে ৪ বা ততোধিক শিকার করে ফেললেন।

টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের এক সময়ের সর্বোচ্চ ৮৭ ডিসমিসাল ছিলো খালেদ মাসুদ পাইলটের। তাকে অনেক আগেই টপকেছেন মুশফিক। গতকাল মাঠে নেমেছিলেন ৯৭ শিকার নিয়ে। এর মধ্যে ৮৫টি ও ১২টি স্টাম্পিং। আর গতকাল আরও ৪টি ক্যাচ নিলেন। ফলে শিকার হলো ১০১টি। এর মধ্যে ৮৯টি ক্যাচ ও ১২টি স্টাম্পিং।

মুশফিকের পাশাপাশি কীর্তি গড়ার পথে আছেন সাকিবও। বাকী দুটি উইকেট তিনি তুলে নিতে পারলে ক্যারিয়ারে তৃতীয়বারের মতো ম্যাচে সেঞ্চুরি ও ৫ উইকেটের কীর্তি হবে। ইংল্যান্ডের ইয়ান বোথাম ছাড়া ক্রিকেট দুনিয়ায় আর কেউ এই কাজ দুই বারের বেশি করতে পারেননি।

সাকিব হয়তো বোথামের কথা ভেবে মাঠে নামবেন না। তার চেয়ে বড় লক্ষ্য যে তার সামনে—বাংলাদেশকে জয় এনে দেওয়া।

ইত্তেফাক

No comments:

Post a Comment

Recent Posts Widget