জেসন
মোহাম্মদ ও এ্যাশলে নার্সের সপ্তম উইকেট জুটিতে ২৭ বলে অবিচ্ছেদ্য ৫০ রানে
ভর করে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে সফরকারী পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় পেয়েছে
স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৩০৯ রানের বড় টার্গেট তাড়া করে পাকিস্তানের
বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে দুর্দান্ত এক জয়ের স্বাদ পায় ক্যারিবিয়রা। গায়ানাতে
পাকিস্তানকে ৪ উইকেটে হারিয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়েও গেলো
জেসন হোল্ডারের দল। নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে এই প্রথমবার ৩শ রানের বেশি
টার্গেট তাড়া করে ম্যাচ জিতলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
চার
ম্যাচের টি-২০ সিরিজ ৩-১ ব্যবধানে হারের স্বাদ নিয়ে প্রথম ওয়ানডে টস জিতে
প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক হোল্ডার।
প্রথমে ব্যাট করার সুযোগ দারুণভাবে কাজে লাগান পাকিস্তানের দুই ওপেনার
আহমেদ শেহজাদ ও কামরান আকমল। উদ্বোধনী জুটিতে ৯০ বলে ৮৫ রান করেন তারা।
কামরান
৪৭ রানে ফিরলেও, ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৪তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন শেহজাদ।
৬টি চারে ৮৩ বলে ৬৭ রানে থামেন তিনি। পরবর্তীতে পাকিস্তানের রানের চাকা
ঘুরেছে মোহাম্মদ হাফিজ ও শোয়েব মালিকের ব্যাটের উপর ভর করে।
মাঝে
চার নম্বরে নেমে ১৩ রানের বেশি করতে পারেননি বাবর আজম। তাই চতুর্থ উইকেটে
মারমুখী মেজাজে ব্যাট করে পাকিস্তানকে বড় স্কোরের পথ দেখান হাফিজ ও মালিক।
৩৬ ওভারের পঞ্চম বল থেকে জুটি বেধে ৫৬ বল মোকাবেলায় ৮৯ রান যোগ করেন হাফিজ ও
মালিক। এতে ৩ উইকেটে ২৬৬ রানে পৌঁছে যায় পাকিস্তান।
হাফিজ
৬টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৯২ বলে ৮৮ রানে এবং মালিক ৬টি চার ও ২টি ছক্কায় ৩৮
বলে ৫৩ রান করে ফিরেন। ২৮৪ রানের মধ্যে এই দু’জনের বিদায়ে কোন ক্ষতি হয়নি
পাকিস্তানের। কারণ, শেষ দিকে অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক সরফরাজ আহমেদের ১৩ বলে
অপরাজিত ২০ ও ইমাদ ওয়াসিমের অপরাজিত ৬ রানের কল্যাণে ৫ উইকেটে ৩০৮ রানের বড়
সংগ্রহ পায় পাকিস্তান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে অ্যাশলে নার্স ৬২ রানে ৪
উইকেট নেন।
জবাবে
দলীয় ২৩ রানের ওপেনার চ্যাডউইক ওয়ালটনকে হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এরপর ৬৮
রানের জুটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে লড়াইয়ে টিকিয়ে রাখেন আরেক ওপেনার এভিন লুইস ও
কাইরন পাওয়েল। লুইস ৪৭ রান করে ফিরে গেলেও, দলকে সামনের দিকে টেনে নেন
পাওয়েল।
এ
সময় ওয়ানডে ক্যারিয়ারের অষ্টম হাফ-সেঞ্চুরিও তুলে নেন পাওয়েল। অর্ধশতকের
পর নিজের ইনিংসটা অনেক বেশি বড় করতে পারেননি তিনি। দলীয় ১৫৬ রানে থেমে যান
পাওয়েল। ৫টি চারে ৮৬ বলে ৬১ রান করেন এই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান। পাওয়েলকে
হারানোর ২ রান পর আরও একটি উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পাওয়েলের সাথে
তৃতীয় উইকেটে ৬৩ বলে ৬৫ রান যোগ করার সাই হোপকে থামতে হয় ব্যক্তিগত ২৪
রানে।
১৫৮
রানে চতুর্থ উইকেট হারানোর পর বেশ চাপে পড়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কারণ এই
পরিস্থিতি ম্যাচ জয়ের জন্য ৬ উইকেট হাতে নিয়ে ৯৮ বলে ১৫১ রান প্রয়োজন পড়ে
ওয়েস্ট ইন্ডিজের। প্রয়োজনীয় রান রেট সাড়ে ৯-এর কাছে। এ
অবস্থায় নতুন ব্যাটসম্যান হিসেবে উইকেটে ছিলেন জেসন মোহাম্মদ ও জনাথন
কার্টার। রান তোলার গতিটা বাড়ানোর চেষ্টা করেছেন তারা। পুরোপুরি সফল না
হলে, আংশিক সাফল্য পেয়েছেন মোহাম্মদ ও কার্টার। ৪৭ বলে তাদের ৭০ রানের জুটি
তেমনটাই বলছে। তবে এই ৭০ রানের জুটির মধ্যে মোহাম্মদেরই অবদান ছিলো ৫৬
রান। ১৪ রান করে কার্টার ফিরে গেলে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ভরসার প্রতীক হয়ে টিকে
ছিলেন মোহাম্মদ।
ভরসার
প্রতিদান পরের ওভারগুলোতেও দিয়েছেন মোহাম্মদ। ষষ্ঠ উইকেটে অধিনায়ক
হোল্ডারের সাথে ৩ ওভারে ৩১ রান দলকে এনে দেন তিনি। এখানেও তার অবদান ছিলো
বেশি। এসময় মোহাম্মদ ২০ ও হোল্ডার ১১ রান যোগ করেন।
৪৫তম
ওভারের তৃতীয় বলে হোল্ডার যখন ফিরেন তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের দরকার ছিলো ৩৩
বলে ৫০ রান। সেই কাজটি ১ ওভার হাতে রেখেই সেরে ফেলেন মোহাম্মদ ও আট নম্বরে
নামা নার্স।
পরের
২৭ বলে ৫০ রান যোগ করে অবিচ্ছিন্ন থাকেন মোহাম্মদ ও নার্স। এতে স্মরণীয়
জয়ের স্বাদ পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মোহাম্মদ ১১টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৫৮ বলে
অপরাজিত ৯১ ও নার্স ৫টি চার ও ১টি ১৫ বলে ৩৪ রানে অপরাজিত থাকেন।
পাকিস্তানের মোহাম্মদ আমির ও শাহদাব খান ২টি করে উইকেট নেন।
ম্যাচের সেরা হয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের মোহাম্মদ। একই ভেন্যুতে আগামীকাল অনুষ্ঠিত হবে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে। ইএসপিএন ক্রিকইনফো/বাসস
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান : ৩০৮/৫, ৫০ ওভার (হাফিজ ৮৮, শেহজাদ ৬৭, মালিক ৫৩, নার্স ৪/৬২)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ৩০৯/৬, ৪৯ ওভার (মোহাম্মদ ৯১*, পাওয়েল ৬১, শাহদাব ২/৫২)।
ফল : ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ : তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেলো পাকিস্তান।
ম্যাচ সেরা : জেসন মোহাম্মদ (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)।
No comments:
Post a Comment