লম্বা
ছুটি কাটিয়ে ঢাকায় ফিরেছেন জাতীয় দলের ওয়ানডে অধিনায়ক। ফেরার আগেই আরও
একবার অপ্রত্যাশিতভাবে তাকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, বিসিবি তার
বিকল্প খোঁজ করছে ২০১৯ বিশ্বকাপকে সামনে রেখে। এই বিষয়ে মন্তব্য করতে
চাইলেন না অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। তারপরও নিজের অধিনায়কত্ব, ঈদের
ছুটি ও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়ে বিস্তারিত কথা বললেন এই ফাস্ট বোলার।
অধিনায়কের একান্ত সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দেবব্রত মুখোপাধ্যায়
ঈদের ছুটি কেমন কাটল?
অন্য
বছরের মতোই। বাড়িতে থাকতে পারলে ঈদের সময়টা সব সময়ই খুব আনন্দে কাটে।
সুযোগ থাকলে আমি বাড়ি আসাটা মিস করি না। এবার বেশ লম্বা ছুটি থাকায় অনেক
দিন ধরে বাড়ি ছিলাম।
কয়েকজন ক্রিকেটার গিয়েছিলেন আপনার ওখানে। বিশেষ করে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ তো খুব মুগ্ধ নড়াইল গিয়ে।
এটা
ওর কৃতিত্ব। আমরা তো বাড়তি কিছু করিনি। ওর এখানে এসে ভালো লাগলে সেটা খুব
ভালো ব্যাপার। আমি চেষ্টা করেছি, সব বন্ধুদের সঙ্গে যেমন করি, তেমনই ওকে
সময় দিয়েছি। ক্রিকেটাররা তো আসলে আমার পরিবারেরই একটা অংশ। ওরা আসাতে আমরাও
খুব আনন্দ পেয়েছি।
ইদানীং আপনার জন্য নড়াইল যাওয়াটা ভক্তদের কারণে কি একটু বিড়ম্বনায় পরিণত হয়েছে?
ঠিক
বিড়ম্বনা বলা যাবে না। মানুষ তো আসলে ভালোবাসে বলে আসে। তবে হয় কি, আমারও
তো পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো বা অন্য কাজ থাকে। তাই সব সময় দেখা করা, ছবি
তোলার দাবি রাখাটা কঠিন হয়ে যায়। টানা সব সময় তো আমার পক্ষে সময় দেওয়াটা
সম্ভব না।
এবার মনে হয় আপনি ভক্তদের জন্য একটা সময় ঠিক করে দিয়েছিলেন?
হ্যাঁ।
সবাইকে আমি অনুরোধ করবো, এরপর আমি বাড়িতে থাকলে এ রকম সময় মেনে আসলে আমার
জন্য খুব সুবিধা হয়। ওনাদেরও সমস্যা হয় না। কারণ, তাতে ওনাদের এসে অপেক্ষা
করে থাকতে হয় না। এই তো। একটু সময় অনুসরণ করলে সব সমস্যার সমাধান হয়।
একটু ক্রিকেটে আসি। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেমিফাইনাল খেললেন। আপনার কাছে এই টুর্নামেন্টে আমাদের পারফরম্যান্সের মূল্যায়ন কি?
সামগ্রিকভাবে
দেখলে তো খুব ভালো। একটা আইসিসি টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল খেলা, এটা সহজ
কথা না। যেভাবেই বলি না কেন, এটা বড় একটা অর্জন। কিন্তু আমি মনে করি, এখানে
আরও ভালো ক্রিকেট খেলার সুযোগ ছিল আমাদের। আমি নির্দিষ্ট করে সেমিফাইনাল
ম্যাচটার কথা বলছি না। পুরো টুর্নামেন্টেই আরও কোয়ালিটি ক্রিকেট খেলা উচিত
ছিল। সেটা খেলার যোগ্যতা আছে আমাদের। কিন্তু হয়নি।
নিউজিল্যান্ডের
বিপক্ষে জেতা ম্যাচে আমরা তাদের ৮টি উইকেট নিতে পেরেছি। বাকি তিন ম্যাচে
মোট ৪ উইকেট নেওয়া গেছে। বোলিংটাই কি তাহলে পার্থক্য গড়ে দিল?
বোলিংটা
আপ টু দ্য মার্ক ছিল না। এককভাবে কোনো বোলারকেই দোষ দেওয়া যাবে না। বোলিং
গ্রুপ হিসেবে আমরা একদমই ভালো করতে পারিনি। এটার নানা কারণ ছিল। অনেক
ব্যাখ্যাও দেওয়া যায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এটাই সত্যি যে, আমরা ভালো বোলিং
করতে পারিনি। আর ম্যাচ জিততে হলে বা ওভারঅল ভালো করতে গেলে যে কোনো দলকে
ভালো বোলিং করতেই হবে।
ব্যাটিংয়েও দেখা গেল আমরা খুব বেশি তামিম নির্ভর।
সেটা
অনেক দিন ধরেই। এটাকে ঠিক তামিম নির্ভরতা আমি বলবো না। সব দলেই একজন ‘কি
ব্যাটসম্যান’ থাকে। তামিম আমাদের সেই খেলোয়াড়। ও ভালো করলে বাকিরা সেই
ইনিংসের ওপর দাঁড়িয়ে একটা বড় ইনিংস খেলে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ওই
ব্যাপারটা মিসিং ছিল। তামিম ভালো খেলছে, কিন্তু অন্যরা সেটাকে কাজে লাগাতে
পারছে না। এমন হতে পারে। আবার দেখেন, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে কিন্তু তামিম
ভালো না করার পরও সাকিব আর রিয়াদের দারুণ দুটো ইনিংসে আমরা ম্যাচ বের করে
আনলাম। আসলে বাকি ম্যাচগুলোতে এই সবার পারফরম্যান্সটা মিসিং ছিল।
তামিম,
সাকিব, রিয়াদ; এমনকি মুশফিকও রান পেয়েছেন। বিপরীতে সৌম্য, সাব্বির,
মোসাদ্দেক; আমাদের তরুণরা ব্যর্থ হয়েছেন। এটা কি তরুণদের জন্য বড় মঞ্চের
চাপ হয়ে গিয়েছিল?
খানিকটা
নার্ভের ব্যাপার হতে পারে। এ রকম বড় টুর্নামেন্টে এটা হয়। অস্বাভাবিক কিছু
না। আবার এমনিতেই ব্যাডপ্যাচ যেতে পারে। আমাদের জন্য ভালো খবর হলো, আমাদের
যারা সিনিয়র খেলোয়াড় এরা কন্ট্রিবিউট করতে পেরেছে। তরুণরা তো পারবেই। ওদের
সামনে সময় আছে। একটা টুর্নামেন্ট গেল। এটাকে ওরা একটা শিক্ষা হিসেবেও নিতে
পারে।
একেবারে সাম্প্রতিক আলোচনায় আসি। বলা হচ্ছে, ২০১৯ বিশ্বকাপের জন্য অধিনায়ক হিসেবে আপনার বিকল্প কাউকে খোঁজা হচ্ছে?
আমি
এই ব্যাপারটায় মন্তব্য করতে চাচ্ছিলাম না। এটা ঠিক আমার কথা বলার বিষয়ও
না। আমার কাজ মাঠে পারফরম করা। আমি সেটা করতে পারছি কি না, এটা নিয়েই আমি
ভাবি। আর অধিনায়কত্ব নিয়ে আমি আলাদা করে কখনোই ভাবি না। আমি চিন্তা করি,
খেলাটা উপভোগ করছি কি না। নিজেকে প্রশ্ন করে বুঝি, আমি খেলাটা উপভোগ করছি।
No comments:
Post a Comment