মাঝখানে একটি দুর্ঘটনা আছে খুলনা টাইটানসের। রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে ৪৪ রানে অলআউট হওয়ার সেই লজ্জার আগে-পরে অবশ্য তাদের ভাগ্যলিপি অন্যভাবেই লেখা হয়েছে। তবে সেই একই চিত্রনাট্য যে বারবার রচিত হতে পারে, সেটি সম্ভবত ধারণার বাইরেই ছিল তামিম ইকবালের। এ জন্যই জেতা ম্যাচ হারতে হারতেও ঠিক বিশ্বাস হতে চায়নি চিটাগং ভাইকিংস অধিনায়কের, ‘এ রকম ঘটনা প্রতি দশবারে একবার ঘটার কথা।’
রাজশাহী কিংসের বিপক্ষে যখন একবার ঘটেই গেছে, তখন নিজের দলকে অন্তত নিরাপদ ভাবার অবকাশ ছিল তাঁর। কিন্তু মাহমুদ উল্লাহর নিয়তি এটাও ঠিক করে রেখেছিল যে বল হাতে শেষ ওভারের ঝলকে তিনি বারবার জেতাবেন খুলনাকে। তাঁর ক্ষেত্রে যে এই ঘটনা ঘটল দুইবারে দুইবারই। তাঁর বোলিং জাদুতে শেষ ওভারে নিশ্চিত হওয়া অবিশ্বাস্য দুই জয়ের মোড়কে রংপুর ম্যাচের ব্যাটিং লজ্জা এখন দিব্যি আড়াল হয়ে অন্যভাবে বিকশিত হওয়ার পথে আছেন খুলনার অধিনায়ক মাহমুদ উল্লাহও।
যাঁর ব্যাটে লোকে ম্যাচ জেতানো ইনিংসের আশাই করে। দেশের হয়ে তো বটেই, প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে বিভিন্ন দলের হয়েও সেরকম ইনিংসের অভাব নেই কোনো। তবে মোটামুটি মানের অফ স্পিনার মাহমুদ উল্লাহর কাছে কাজ চালানো বোলিংয়ের আশা থাকলেও ম্যাচ জিতিয়ে দেওয়ার চাহিদা থাকে না সেভাবে। তাই চলতি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) রাজশাহীর বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচে শেষ ওভারে ৪ বলের মধ্যে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে জেতানোর পর সেটিকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলেই ধরা হচ্ছিল।
সম্ভবত তাই ধরেছিলেন তামিমও। আর বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে কেউ উদাহরণ বলেও ধরতে চান না। কিন্তু একই রকম বারবার ঘটিয়ে বোলার হিসেবে ম্যাচ জেতানোকে নিয়মই বানিয়ে ফেলার পথে মাহমুদ উল্লাহও। শেষ ওভারে ৭ রানের প্রয়োজন মেটাতে না পারা রাজশাহী হেরেছিল ৩ রানে। তুলনায় তামিমের চট্টগ্রাম সুবিধাজনক অবস্থানেই ছিল। ৪ উইকেট হাতে নিয়ে শেষ ওভারে তাদের দরকার ছিল ৬ রানের। দুই সেট ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ নবী ও চতুরঙ্গা ডি সিলভাও ছিলেন উইকেটে। কে ভাবতে পেরেছিল যে সেখান থেকে ম্যাচ হারবেন তামিমরা?
অন্যদের কথা বাদ দিন। মাহমুদ উল্লাহ নিজেও তো ভাবেননি যে ওই অবস্থা থেকে ম্যাচ বের করে আনবেন, ‘সত্যি কথা, আমি শুধুমাত্র ভালো জায়গায় বোলিং করার চেষ্টা করেছি। এর বাইরে কিছুই না। আমি ভেবেছিলাম ম্যাচটি আমরা হেরেই গেছি। কারণ ৬ বলে ৬ রানের দরকার ছিল। ওই সময়ে জেতার জন্য একটি ছক্কাই তো যথেষ্ট ছিল।’ এমনকি ম্যাচ শেষ হওয়ার আধঘণ্টা পরও খুলনা অধিনায়কের কাছে এই জয়ের রহস্যটা পরিষ্কার ছিল না। হাসতে হাসতেই সংবাদ সম্মেলনে বলছিলেন, ‘জানি না, হয়ে গেছে। এর বাইরে আমি সত্যিই কিছু জানি না। খুবই নার্ভাস লাগছিল। এখনো আমার হাত ঘামছে। জানি না...। আমি শুধু নবীকে যথাসম্ভব কম স্ট্রাইক দেওয়ার চেষ্টা করেছি। চতুরঙ্গার উইকেটটিও ওই সময় খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল।’
শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলেই এই শ্রীলঙ্কানকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানানো মাহমুদ উল্লাহর আত্মবিশ্বাসের পালে হাওয়াটা লাগে এর একটু আগেই, ‘প্রথম বলটা ডট দেওয়ার পরই আস্তে আস্তে আত্মবিশ্বাসটা ফিরে আসে। উইকেট পাওয়ার পর তা আরো জমাট হয়।’ ১ বল পর রাজ্জাককেও নিজের ঝুলিতে ভরা খুলনা অধিনায়কের সৌভাগ্য যে ম্যাচের শেষ বলে স্নায়ুর চাপ সামলাতে পারেননি নবীও। ততক্ষণে সেট হয়ে যাওয়া আফগান ব্যাটসম্যানের যেখানে দলকে জয়ের ঠিকানায় নিয়ে যাওয়ার কথা, সেখানে লংঅফে কেন তিনি উইকেট দিয়ে আসবেন?
নবী তাই দিলেন এবং তাতে দুইয়ে দুই হয়ে গেল মাহমুদ উল্লাহর। ব্যাটিং লজ্জার ম্যাচটি বাদ দিলে বাকি দুই ম্যাচেই শেষ ওভারের চ্যালেঞ্জ নিয়ে জিতলেন খুলনা অধিনায়ক। বিশেষ করে কাল জেতানোর পথে কি গত মার্চে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ভারত ম্যাচটির কথাও মনে পড়ে যায়নি তাঁর? সেবার বাংলাদেশ যেভাবে হেরেছিল, কালকের চট্টগ্রামের হারও তার প্রায় কাছাকাছিই। যদিও মাহমুদ বললেন ভিন্ন কথাই, ‘ওই ম্যাচটির (ভারত) কাছে এই ম্যাচ কিছুই না। জানি না, ওই হারের ক্ষত কিভাবে পূরণ হবে। ওটা সারা জীবনই দাগ কেটে থাকবে। আবারও যদি একই রকম পরিস্থিতি হয় এবং আমি থাকি, চেষ্টা করব সেরাটা দেওয়ার। প্রয়োজন হলে জীবন দিয়ে চেষ্টা করব।’
এই বিপিএলেও দলের প্রয়োজনে মনপ্রাণ সঁপে দিচ্ছেন অফ স্পিনার মাহমুদ উল্লাহ!
http://www.kalerkantho.com
No comments:
Post a Comment