ফুটবল রোমান্টিকদের জন্য এ তো স্বপ্নের রাত। চ্যাম্পিয়ন্স লীগের নক্ষত্রখচিত
মেগা ফাইনালে আজ মুখোমুখি রিয়াল মাদ্রিদ ও জুভেন্টাস।
কার্ডিফের বিখ্যাত মিলেনিয়াম স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় রাত ১২টা ৪৫ মিনিটে শুরু
হবে বিশ্বের অন্যতম সেরা আক্রমণভাগের সঙ্গে সবচেয়ে জমাট রক্ষণভাগের ধুন্ধুমার
লড়াই। যে লড়াই শেষে স্বপ্নের রাতটা কোনো এক পক্ষের জন্য হয়ে থাকবে দুঃস্বপ্নের
আখ্যান!
ফাইনালে হারার পর কিছুতেই মেলে না সান্ত্বনা। গৌরবগাথা আর দুঃখগাথার যুগল মঞ্চ
সাজিয়ে প্রস্তুত কার্ডিফ। সেই মঞ্চে আজ ইউরোপসেরার মুকুট উঠবে কার মাথায়- রিয়াল
মাদ্রিদ না জুভেন্টাস?
তাড়নাটা দু’দলেরই সমান হওয়ার কথা। রিয়াল দাঁড়িয়ে
ইতিহাসের সামনে। চ্যাম্পিয়ন্স লীগ যুগে প্রথম দল হিসেবে শিরোপা ধরে রাখার
হাতছানিতে উজ্জীবিত রেকর্ড ১১ বারের ইউরোপসেরারা। রিয়ালের কোচ হিসেবে ঐতিহাসিক এ
কীর্তি গড়ার পথে জিনেদিন জিদানের সামনে শেষ বাধা তারই সাবেক দল জুভেন্টাস। যারা
ইউরো মঞ্চে ২১ বছরের শিরোপাখরা কাটাতে আক্ষরিক অর্থেই মরিয়া।
জিভে জল আনা এ লড়াইয়ে ব্যবধান গড়ে দেয়ার মতো কুশীলব কম নেই। দু’দলের খেলার ধরন অনুযায়ী সবচেয়ে আকর্ষণীয় খণ্ড লড়াইটা হতে পারে ক্রিশ্চিয়ানো
রোনাল্ডো ও গিয়ানলুইগি বুফনের মধ্যে। তর্কসাপেক্ষে বিশ্বের সেরা স্ট্রাইকার বনাম
সেরা গোলকিপার।
ডাগআউটে মস্তিষ্কের লড়াইটা হবে জিদান ও ম্যাসিমিলিয়ানো আলেগ্রির মধ্যে।
জুভেন্টাসের হিগুয়াইন ও সামি খেদিরার মতো রিয়ালের আলভারো মোরাতা নামবেন তার সাবেক
দলের বিপক্ষে। রিয়ালের ওয়েলস তারকা গ্যারেথ বেল ফিরছেন নিজের আঙিনায়। যদিও পায়ের
চোট পুরো না সারায় ফাইনালে প্রথম একাদশে সম্ভবত জায়গা হবে না বেলের।
এত এত বর্ণিল চরিত্রের ভিড়েও ফাইনালের আগে সবচেয়ে আলোচিত নাম জিদান। ফুটবলার
হিসেবে সম্ভাব্য সব কিছুই জিতেছেন এই ফরাসি কিংবদন্তি। কোচ হিসেবে মাত্র ১৭ মাসে
তার অবিশ্বাস্য সাফল্য আরও বড় চমক হয়ে এসেছে সবার জন্য। গত মৌসুমের মাঝপথে দলের
দায়িত্ব নিয়েই রিয়ালকে জেতান চ্যাম্পিয়ন্স লীগ।
এবার পাঁচ বছর পর দলকে এনে দিয়েছেন লীগ শিরোপা। এখন জিদানের সামনে হাতছানি
১৯৫৮ সালের পর রিয়ালকে প্রথম লীগ ও চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ‘ডাবল’ এনে দেয়া।
রিয়ালের শেষ তিনটি ইউরোপিয়ান ট্রফির সঙ্গেই জড়িয়ে আছে জিদানের নাম। তার গোলেই
২০০২ সালে নবম চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জিতেছিল রিয়াল। এক যুগ পর ‘লা ডেসিমা’ জয়ী দলে তার ভূমিকা ছিল সহকারী কোচের।
গতবার মূল কোচ হিসেবে জিতেছেন ‘উনডেসিমা’। এবার হাতছানি ‘ডুয়োডেসিমার’ (দ্বাদশ শিরোপা)। ১৯৯২-৯৩ মৌসুমে
ইউরোপসেরার প্রতিযোগিতা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ নাম ধারণের পর টানা দু’বার চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি কোনো দলই।
সেই অচলায়তন ভাঙার অভিযানে জিদান নামছেন দ্বিখণ্ডিত হৃদয়ে! ২০০১ সালে রিয়ালে
আসার আগে পাঁচ বছর খেলেছেন জুভেন্টাসে। এর মধ্যে ১৯৯৭ ও ১৯৯৮ সালে টানা দু’বার চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালে হেরেছিলেন বরুশিয়া ডর্টমুন্ড ও রিয়ালের কাছে।
এখনও সেই যন্ত্রণা ভুলতে পারেননি জিদান,
‘ফাইনালে হারাটা
ভয়াবহ এক অনুভূতি। পরে রিয়ালের হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জিতে সেই দুঃখ কিছুটা
ভুলেছিলাম। এখন সামনে আরেকটি ফাইনাল। আমার জন্য যা বিশেষ কিছু। জুভেন্টাসে পাঁচ
বছর খেলেছি। দুর্বলতা অবশ্যই আছে। কিন্তু এখন শুধু রিয়ালেরই ডিএনএ আমার মধ্যে।
স্পেশাল ফাইনালটা জিততে সামর্থ্যরে সবটুকু দিয়েই চেষ্টা করব।’
মরিয়া চেষ্টা থাকবে বুফনের মধ্যেও। ২০০৬ বিশ্বকাপজয়ী ইতালির এই কিংবদন্তি
গোলকিপার বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে এই একটি ট্রফিই শুধু উঁচিয়ে ধরতে পারেননি। হেরেছেন
২০০৩ ও ২০১৫ সালের ফাইনালে। তার দল দু’বারের ইউরোপসেরা জুভেন্টাসের গল্পটাও একই
রকম। চ্যাম্পিয়ন্স লীগ যুগে রেকর্ড ছয়বারের রানার্সআপ তারা! হেরেছে নিজেদের শেষ
চারটি ফাইনালেই। এবার সেই গেরো খুললে ইউরোপের মাত্র অষ্টম দল হিসেবে ‘ট্রেবল’ জয়ের উৎসব করবে জুভেন্টাস।
পুরো আসরে মাত্র তিনটি গোল হজম করা তুরিনের বুড়িরা শেষ যুদ্ধে রিয়ালকে আটকে
দিতে পারলে বুফনের ব্যালন ডি’অর জয়ের সম্ভাবনাও বেড়ে যাবে। কিন্তু
চ্যাম্পিয়ন্স লীগের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা রোনাল্ডো কি তা হতে দেবেন? এএফপি/ওয়েবসাইট।
No comments:
Post a Comment