অলিম্পিক ফুটবলে প্রথম সোনা ব্রাজিলের

অবশেষে পারলো নেইমারের ব্রাজিল। পেনাল্টি শ্যুট আউটে জার্মানিকে - গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মত অলিম্পিক ফুটবলে স্বর্ণ জিতলো বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। দুর্দান্ত এক ফ্রিকিকের পর, পেনাল্টি থেকেও জয়সূচক গোল করেন খোদ অধিনায়ক নেইমার। ব্রাজিলের বিখ্যাত স্টেডিয়াম মারাকানায় এই জয় দিয়ে দক্ষিণ আমেরিকার প্রথম অলিম্পিকটি স্মরণীয় করে রাখলো ব্রাজিল ফুটবল দল।

স্বাগতিক ব্রাজিল, প্রতিপক্ষ জার্মানি। স্তাদিও মিনেরিওর সেই স্মৃতি ব্রাজিলিয়ান মাত্রই মনে পড়তে বাধ্য। সেই ব্রাজিল আর এই ব্রাজিলে, সেই জার্মানি আর এই জার্মানিতে আকাশ পাতাল পার্থক্য। সেসব ছাপিয়ে সবচেয়ে বড় পার্থক্যের নামটা নেইমার।
 
মারাকানার ৭০ হাজার আসন কানায় কানায় পূর্ণ স্বর্ণজয়ের মহারণ দেখতে। তাদের বুকের ধুকপুকুনি বাড়িয়ে দিয়ে নয় মিনিটেই জার্মান শট ব্রাজিলের পোস্টে লেগে ফেরত আসে।

বারে বল লাগার শোধ নিলেন নেইমার। সেও রাজকীয় ভঙ্গিমায়, ২৭ মিনিটে ২৫ গজী এক ফ্রি কিকে পরাস্ত করলেন জার্মান দেয়াল, বল জড়ালো জালে। মারাকানাকে উৎসবের মঞ্চে পরিণত করা নেইমারের উদযাপনটাও হলো বোল্টের কায়দায়।

কিন্তু মারাকানার উৎসব বেশিদূর গড়ালো না। বিরতির ১৩ মিনিটের মাথায়, ব্রাজিল রক্ষণ ভুলে যায় জার্মানির অধিনায়ক ছিলেন ঠিক ডি বক্সের মধ্যখানে। সেখান থেকেই ম্যাক্স মেয়েরের জোরালো শটে স্তব্ধ ব্রাজিল। সমতায় মহারণ।

এরপর শুধু ব্রাজিলের আক্রমণ আর জার্মান রক্ষণের খেলা। নেইমার, হেসুস, বারবোসা! একের পর এক নান্দনিক আক্রমণ। মূল দলে না হলেও, এই অনূর্ধ্ব ২৩ দলে যেন জোগো বোনিতোর আভা! কিন্তু সেই বহুল কাঙ্ক্ষিত গোলের দেখা নাই।

- এর সমতায় খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। কিন্তু সেখানেও একই চিত্র। বারবার গোলমুখে থমকে যাওয়ার সুর। যেন ফুটবল ঈশ্বরের পাণ্ডুলিপিতে লেখা ছিল পেনাল্টি শ্যুটআউট।

স্পটকিকের আগে পিনপতন নীরবতা মারাকানা জুড়ে। ১৯৫০ এর স্মৃতি ফ্ল্যাশব্যাকে। কিন্তু এবারের চিত্রনাট্য সম্পূর্ণ ভিন্ন। প্রথম চার শটে অব্যর্থ জার্মানি-ব্রাজিল। জার্মানির নিলস পিটারসেনকে হতাশ করেন ওয়েভারটন। সঠিক অনুমানে উল্লাস তখন ব্রাজিল জুড়ে। অপেক্ষা শেষ দৃশ্যের! নায়ক যেখানে নেইমার। আবেগ পাথর চাপা দিয়ে শট নেয়ার পর, মারাকানা জুড়ে আবেগের তরঙ্গই ছড়িয়ে দিল জার্সি মুখে চেপে নেইমারের কান্না।

এই জয় শুধু ব্রাজিলের প্রথম অলিম্পিক স্বর্ণ নয়, এটি রিও অলিম্পিকের স্বার্থকতাও বহন করে। ফুটবলের দেশে স্বর্ণজয়ী দলটার নাম এখন ব্রাজিল।

ব্রাজিল জুড়ে জয়ের উৎসব

২০১৪ বিশ্বকাপে জার্মানির কাছে - গোলে হারের পরেই, দুর্দিনের শুরু হয়েছিলো ব্রাজিল ফুটবল দলে। টানা দুটি কোপা আমেরিকায় ধারাবাহিক ব্যর্থ ব্রাজিল, ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বেরোতে তীর্থের কাকের মত অপেক্ষায় ছিলো শিরোপার জন্য। শেষ পর্যন্ত মিলেছে শিরোপা, এসেছে স্বস্তি। পুরো ব্রাজিল তাই মেতে আছে জয়ের উৎসবে।

নেচে গেয়ে অলিম্পিকের স্বর্ণ জয় উদযাপন করেছে পুরো দেশের মানুষ। উৎসবের নগরী এখন পুরো দেশ। এদিকে, এত কাছে এসে হেরে যাওয়ায় হতাশ জার্মানির সমর্থকরা।

রিও মারাকানা যেন এক জনসমুদ্র। যারা টিকিট নামক সোনার হরিণ পেয়েছেন, তারাতো ভাগ্যবান, আর যারা পাননি, তারাও নিজ দায়িত্বে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বড় পর্দার সামনে বসে প্রিয় দলের ম্যাচ ফাইনাল দেখতে। মূল মঞ্চ মারাকানা। কিন্তু একে ঘিরে প্রার্থনায় পুরো জাতি। ১১ জন হলুদ সেনানী পুরো জাতিকে গেঁথেছেন এক সুতোয়।

কি হয়, না হয়, না শেষ পর্যন্ত দলনেতা নেইমারের গোলের সঙ্গে আনন্দ যজ্ঞে মেতে উঠেছে পুরো জাতি। একটি ফাইনাল পুরো দেশকে নিয়ে এসেছে এক ছাতার নিচে। ভাসিয়েছে আনন্দের সাগরে। হবেই বা না কেন বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে সফল দল তারা। সেই তাদেরই কাঁদতে হয়েছে ১৯৮৪, ৮৮ ২০১২ -এর ফাইনালে হেরে।

এবার তাই প্রতিশোধের সঙ্গে মিলেছে শিরোপার প্রাপ্তি। আনন্দে আত্মহারা তাই পুরো জাতি।

ঐতিহ্য আর চিরায়ত সৌন্দর্যের দেশ ব্রাজিল। দক্ষিণ আমেরিকার প্রথম অলিম্পিকে অর্জনের পর, রিওর রাস্তায় নেমে পরেন হাজার মানুষ। নেচে গেয়ে তারা ব্রাজিলের জয় উদযাপন করেন।

এদিকে জয়ের এত কাছে এসেও হেরে যাওয়ার কষ্টে কেঁদেছেন জার্মান সমর্থকরা। তবে, সে সঙ্গে ব্রাজিলিয়দের আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়েছেন অনেক সমর্থক।

জার্মানদের বিপক্ষে জয় শুধু একটি স্বর্ণই নয়, ২০১৪ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে - গোলের তপ্ত সে হারের মধুর প্রতিশোধও ব্রাজিলিয়ানদের জন্য।
Recent Posts Widget