মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম আজ বিরাট কোহলির দুর্দান্ত এক ডবল সেঞ্চুরির সাক্ষী হলো। এই ইনিংস দিয়ে কোহলি যে অনেক প্রশ্নেরই উত্তর দিয়ে দিলেন। এই ইনিংস যেন তাঁকে বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যানের দৌড়ে এগিয়ে দিল অনেকটাই। কোহলির ২৩৫, নয়ে নেমে জয়ন্ত যাদবের ১০৪-এ অলআউট হওয়ার আগে ভারত তুলেছে ৬৩১ রান। ২৩১ রানের লিড পেয়ে গেছে তারা। ১৮৩ ওভার ফিল্ডিংয়ের ধকল সামলে দ্বিতীয় ইনিংসে ভালো ব্যাটিং করতে না পারলে ম্যাচটাই হয়তো হারতে হবে ইংল্যান্ডকে। চতুর্থ দিনে প্রায় ৫০ ওভারের মতো খেলা বাকি। ১ রান তুলতেই ১ উইকেট হারিয়ে ফেলেছে ইংল্যান্ড।
ক্রিকেট দুনিয়ায় কোহলির বেশ কয়েকজন প্রতিদ্বন্দ্বী আছেন—জো রুট, ডেভিড ওয়ার্নার, স্টিভেন স্মিথ কিংবা কেন উইলিয়ামস—মুম্বাইয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এই ধ্রুপদি ইনিংসের পরে তাঁর প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বীরা সকলেই কোহলির সঙ্গে মর্যাদার লড়াইয়ে নিজেদের গর্বিত ভাবতেই পারেন। তাঁরা বলতেই পারেন, ক্যারিয়ারে দুর্দান্ত এক চ্যাম্পিয়নের সঙ্গেই আমাদের লড়াইটা হয়েছিল। হেরে গেলেও যে লড়াই লড়তে পারাটাই আনন্দের।
দুর্দান্ত একটি বছর কাটালেন কোহলি। অধিনায়ক হিসেবে এক বছরে করলেন তৃতীয় ডবল সেঞ্চুরি। নর্থ সাউন্ডে, গত জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ইনিংসটি দিয়ে শুরু। গত অক্টোবরে ইন্দোরে করলেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ডাবল। বছরের শেষ মাসে এসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ডাবল সেঞ্চুরিটা অধিনায়ক হিসেবে এক অনন্য রেকর্ডের অধিকারী করল তাঁকে। প্রথম ভারতীয় অধিনায়ক হিসেবে টেস্টে তিনটি ডাবল সেঞ্চুরি পেলেন তিনি।
এই ডাবল সেঞ্চুরি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে রেকর্ডটাকেও সমৃদ্ধ করল তাঁর। এই সিরিজের আগে যে দলটির বিপক্ষে তাঁর গড় ছিল মাত্র ১৩.৪০, সেখানে তিনি সিরিজের একটি টেস্ট বাকি থাকতেই নিজেকে নিয়ে গেলেন অনন্য এক উচ্চতায়। সিরিজে এখন পর্যন্ত ৬১৭ রান করে দ্বিতীয় ভারতীয় অধিনায়ক হিসেবে এক সিরিজে ৬০০-এর বেশি করার কীর্তি গড়লেন। ১৯৭৯-৮০ সালে সুনীল গাভাস্কার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে করেছিলেন ৭৩২। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৯৮১-৮২ সালের সিরিজে গাভাস্কারেরই ব্যাট থেকে এসেছিল ৫০০ রান। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এবারের সিরিজে কোহলি গাভাস্কারের ১৯৭৯-৮০ সালের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবেন সেটিই এখন দেখার।
এই টেস্টে আরও কিছু কীর্তি যোগ হয়েছে কোহলির নামে। এক বছরে তিনটি ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ডে ডন ব্র্যাডম্যান, রিকি পন্টিং ও ব্রেন্ডন ম্যাককালামের পাশে বসেছেন। অবশ্য সর্বোচ্চ চারটি ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ড আছে মাইকেল ক্লার্কের। ২০১২ সালে এই রেকর্ড করেছিলেন ক্লার্ক।
শচীন টেন্ডুলকার ও রাহুল দ্রাবিড়ের পর তৃতীয় ভারতীয় টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে কোহলি এক বর্ষপঞ্জিকায় ছুঁয়েছেন হাজার রানের মাইলফলক। ১৯৯৭ সালে টেন্ডুলকার ১২ টেস্টে ৬২.৫০ গড়ে করেছিলেন ১ হাজার রান। ২০০৬ সালে দ্রাবিড়ের ১ হাজার ৯৫ রান এসেছিল ১২ টেস্টেই (গড় ৬০.৮৩)। কোহলি হাজার রান অতিক্রম করেছেন টেন্ডুলকার ও দ্রাবিড়ের চেয়ে একটি টেস্ট কম খেলেই।
কোহলি তাঁর ক্যারিয়ারেই এই প্রথমবারের মতো এক পঞ্জিকাবর্ষে হাজার রানের মাইলফলক ছুঁলেন। এ বছর সব দল মিলেই হাজার রান করেছেন জনি বেয়ারস্টো, জো রুট ও অ্যালিস্টার কুক।
টেস্টে ৪ হাজার রানের মাইলফলকও অতিক্রম করেছেন কোহলি। ৫২ টেস্টে ৫০.৫৩ গড়ে তাঁর অর্জন ৪ হাজার ১৯৪ রান। সেঞ্চুরির সংখ্যা ১৫, ফিফটি ১৪। চতুর্দশ ভারতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে চার সহস্রাধিক রান তাঁর ঝুলিতে।
মনসুর আলী খান পতৌদি, সুনীল গাভাস্কার, শচীন টেন্ডুলকার, মহেন্দ্র সিং ধোনি—এই চার ভারতীয় অধিনায়ক নিজেদের ২৮ বছর বয়সে টেস্টে একটির বেশি ডবল সেঞ্চুরির দেখা পাননি। ২৮ বছর বয়সেই কোহলি পেয়ে গেলেন তিনটি!
সুনীল গাভাস্কার তাঁর অধিনায়কত্বের পুরো সময়ে করেছিলেন ১১টি টেস্ট সেঞ্চুরি, মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন ৯টি। অধিনায়ত্বের দুই বছর হতে না হতেই কোহলি পেয়ে গেলেন আটটি টেস্ট সেঞ্চুরি!
ভারতীয় অধিনায়ক হিসেবেও সর্বোচ্চ ইনিংসটার রেকর্ড ভেঙে দিলেন। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মহেন্দ্র সিং ধোনি করেছিলেন ২২৪। সেটিই ভারতীয় অধিনায়ক হিসেবে সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ড হয়ে ছিল।
এমন সব রেকর্ড কোহলির পক্ষেই সম্ভব। গাভাস্কার নিজেই বলেছেন, অনাবিষ্কৃত কোনো এক গ্রহ থেকেই নাকি এই ধরাধামে কোহলির আবির্ভাব। সাবেক ভারতীয় অধিনায়ক ভুল বলেননি বোধ হয়। কোহলির পরিসংখ্যানই যে সমর্থন জোগাচ্ছে গাভাস্কারের এই কথায়। সূত্র: এনডিটিভি, পিটিআই।
No comments:
Post a Comment